সুনামগঞ্জ , শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫ , ৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যৌথবাহিনীর অভিযানে রিভলবার উদ্ধার একটি পাথর সরালে জীবন ঝালাপালা করে দেব : ডিসি সারওয়ার আলম সীমান্তে ভারতীয় মোটরসাইকেল জব্দ মধ্যবাজারে ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী আহত চারটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স অকেজো একদিনও সেবা পায়নি চার উপজেলার মানুষ সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক : ভেস্তে গেছে চার লেন প্রকল্প জামালগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন ইরা-সিআরইএ প্রকল্পের ‘অভিযোজন এক্সপো’ সম্পন্ন কাজের খোঁজে গ্রামাঞ্চলের দিনমজুররা শহরমুখী প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই শিল্পপণ্য মেলার আয়োজন! লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যেন ডোবা-নালা তাহিরপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০ র‌্যাবের অভিযানে ভারতীয় ২৭২ বোতল মদ জব্দ যারা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে তারা দেশের শত্রু : কয়ছর এম আহমদ প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে গায়েব জেলার বহু খাল নির্বাচনের জন্য বিএনপি পুরোপুরি প্রস্তুত : কয়ছর এম আহমদ বিশ্বম্ভরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত শান্তিগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০ দেশ যেন মৌলবাদের অভয়ারণ্য না হয় : তারেক রহমান সত্যশব্দের বর্ষার আয়োজন ‘বাদল গেছে টুটি’

গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়ক হয়ে উঠছে মৃত্যুকূপ

  • আপলোড সময় : ২২-০৮-২০২৫ ০৯:৫৩:১৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২২-০৮-২০২৫ ০৯:৫৪:২৬ পূর্বাহ্ন
গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়ক হয়ে উঠছে মৃত্যুকূপ ছবি: সংগৃহীত
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কগুলো ফিটনেসবিহীন গাড়ির ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আবার এই সড়কগুলোয় চলা যানবাহনের বেশির ভাগ চালকই অদক্ষ ও লাইসেন্সহীন। নেই ট্রাফিক পুলিশের নজরদারিও। ফলে নিয়ম-কানুনের বালাই নেই, কেউ মানে না গতিসীমা। এর ওপর এসব সড়কে অতিরিক্ত বাঁক যেমন আছে, তেমনি প্রশস্তকরণসহ সড়কগুলোর উন্নয়নও হচ্ছে না চাহিদা অনুযায়ী। ফলে মৃত্যুকূপ হয়ে উঠেছে গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কগুলো।
গত পাঁচ বছরের আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এর পাশাপাশি গত কয়েক বছরে এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে উঠেছে আরেক মৃত্যুকূপ। এ সময় মহাসড়কের চেয়ে এক্সপ্রেসওয়ে ও আঞ্চলিক সড়কেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে সড়ক-মহাসড়কে মানুষের প্রাণহানি যেমন বাড়ছে, দিন দিন পঙ্গুত্ববরণকারী মানুষের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। গত পাঁচ বছরের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এ সময়ে দুর্ঘটনার প্রায় ৫২.৩৮ শতাংশ ঘটছে আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে। মহাসড়কে ঘটছে ৩৫.২৫ শতাংশ এবং শহরের সড়কে ঘটছে ১১.২৪ শতাংশ দুর্ঘটনা। আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ হিসেবে সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টির বাইরে রাখতে অধিকাংশ আঞ্চলিক সড়কে চালানো হয়। এসব সড়কের চালকরাও অদক্ষ। ভ্যান, অটোরিকশা ও নসিমনের মতো ধীরগতির গাড়ির সঙ্গে উচ্চগতির ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। আঞ্চলিক সড়কে গ্রাম, হাটবাজার, স্কুলের সামনে দিয়ে যান চলাচলের কারণেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি।
এক্সপ্রেসওয়ের ব্যাপারে তারা বলছেন, গতিসীমা উপেক্ষা করে চলাচল করে। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ সক্রিয় হলেও এক্সপ্রেসওয়ে ও আঞ্চলিক সড়কে তেমন টহল না থাকায় সড়কগুলো হয়ে উঠেছে মৃত্যুকূপ। আর সড়ক দুর্ঘটনা শুধু প্রাণহানিই ঘটাচ্ছে না, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির বোঝাও বাড়াচ্ছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা এখন গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। অটোরিকশায় গ্রামের মানুষ দলবেঁধে কাজে ও ঘুরতে বের হয়। এসব ধীরগতির অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয় ট্রাকসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন। আঞ্চলিক সড়কে চলাচলকারীর অধিকাংশ ট্রাকের বয়স ৪০-৪৫ বছর। বালু-ইটবাহী গাড়ি, নছিমনগুলোর বেশিরভাগই সাধারণ শ্রমিকরা চালান। ফিটনেসহীন গাড়ির অদক্ষ চালকরা ছোট যানবাহন চালায় এবং পথচারীদের চাপা দেয়। সাইদুর রহমান আরও বলেন, মহাসড়কে কিছুটা হলেও পুলিশের তদারকি আছে। এখানে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করা হয়। কিন্তু আঞ্চলিক সড়কে পুলিশ থাকে না, তাই কোনো নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি নেই। ওখানে ট্রাফিক আইনের ন্যূনতম প্রয়োগ নেই। এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়েতে গতির নিয়ন্ত্রণ নেই। এক্সপ্রেসওয়েতে নিরাপদে চলাচলের জন্য সচেতনা তৈরি করা হয়নি। ফলে এক্সপ্রেসওয়ে ও আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। সড়ক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মহাসড়কের তুলনায় এক্সপ্রেসওয়ে, আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলোতে দুর্ঘটনা বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। দুর্ঘটনারোধে বিশেষ করে এক্সপ্রেসওয়েতে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সিসিটিভি নজরদারি, গতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি। অন্যদিকে আঞ্চলিক সড়কে ছোট যানবাহনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, পথচারীর নিরাপদ পারাপারের ব্যবস্থা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ বলেন, আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও মোটরসাইকেলের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ব্যাটারিচালিত গাড়ি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এসব গাড়ির ভালো ব্রেক ও ব্যালেন্স নেই। সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনিটরিং কম। দুর্ঘটনারোধে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা লাগবে। সড়কের নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গত পাঁচ বছরের প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে (২০২০ থেকে ২০২৪) আঞ্চলিক সড়কে মোট দুর্ঘটনা ঘটেছে ১১ হাজার ৪০৩টি, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৭.০৫ শতাংশ। একই সময়ে মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১০ হাজার ৮৫১টি, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৫.২৫ শতাংশ। গ্রামীণ সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৭১৯টি, যা মোট দুর্ঘটনার ১৫.৩৩ শতাংশ এবং শহুরে সড়কে ৩ হাজার ৪৬০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা মোট দুর্ঘটনার ১১.২৪ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, আঞ্চলিক সড়কে ২০২০ সালে দুর্ঘটনা সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬০৫টি, ২০২১ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ১ হাজার ৬৭০, ২০২২ সালে ২ হাজার ৩০৫টি, ২০২৩ সালে ২ হাজার ৯৮৭ এবং ২০২৪ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৮৩৬টি। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬১৯টি। গ্রামীণ সড়কে ২০২০ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৬১৭টি, ২০২১ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫৪টি, ২০২২ সালে ১ হাজার ১৮২টি, ২০২৩ সালে ৯৯৪টি ও ২০২৪ সালে ৯৭২টি। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৪৭৪টি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, গ্রামের মানুষ এখনও গ্রামীণ সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোকে এক ধরনের ‘আইল’ মনে করে। এই মানসিকতার কারণে সচেতনতা গড়ে উঠেনি। তিনি বলেন, এই সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা আরও ত্বরান্বিত করছে। এখন আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ব্যাপক আকারে জনসচেতনতা তৈরিই একমাত্র সমস্যা থেকে উত্তরণ করতে পারে। একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় না। স্থানীয় জনগণ উদ্ধারের চেয়ে ভিডিও ধারণে ব্যস্ত থাকে বেশি। কিছু মানুষ থাকে দুর্ঘটনাস্থলের অসহায় মানুষের কাছে থাকা মোবাইল ও টাকা-পয়সা লুটে নেওয়ায় ব্যস্ত। ফলে গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হারও বেশি। ভুক্তভোগীদের এসব বক্তব্যের প্রমাণ মেলে গত ৭ আগস্ট নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের পূর্ব জগদীশপুর এলাকায় একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস খালে পড়ে সাতজন নিহতের ঘটনায়। ওই দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া প্রবাসী আবদুর রহমান জানিয়েছিলেন, খালে পড়ে গাড়িটা নৌকার মতো ভাসতে থাকায় চালককে বললাম দরজার লক খুলে দিতে। কিন্তু তিনি তা খুলেনি। দুই ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস এসে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করে। পরিবারটির স্বজনদের ভাষ্য, মাইক্রোবাসটি আস্তে আস্তে ডুবেছে। মাইক্রোবাস থেকে তিনজন বের হতে পেরেছেন। স্থানীয় ও সরকারি সহায়তা দ্রুত পেলে আরও জীবন বেঁচে যেত। - আমাদের সময়

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
মধ্যবাজারে ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী আহত

মধ্যবাজারে ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী আহত